শ্রীলঙ্কার দেউলিয়াত্ব ঘোচাতে অবশেষে ঋণ দিতে রাজি হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। শ্রীলঙ্কাকে তিন বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিচ্ছে আইএমএফ। এই ঋণ শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি সাবরি জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কা সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজগুলোকে পুনর্গঠন এবং জাতীয় বিমান সংস্থাকে বেসরকারীকরণ করে তহবিল সংগ্রহ করবে।

গত সোমবারই শ্রীলঙ্কার জন্য দীর্ঘ বিলম্বিত বেইলআউট কর্মসূচির অনুমোদন দিয়েছিল আইএমএফ। তবে এর জন্য অন্ততপক্ষে একটি কঠোর শর্ত আরোপ করেছে তারা। তা হলো- ঋণের টাকায় যেন দুর্নীতির ছোঁয়া না লাগে। সংস্থাটি বলেছে, এই সহায়তার সঙ্গে দুর্নীতি নির্মূলের শর্ত রয়েছে। গত বছর শ্রীলঙ্কা নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে পড়ার পেছনে দেশটির দীর্ঘদিনের দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্কৃতি ও সরকারি অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করা হয়।

শ্রীলঙ্কায় আইএমএফের মিশন প্রধান পিটার ব্রুয়ার বলেছেন, গত কয়েক মাস বেলআউট প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা চলাকালীন দুর্নীতিবিরোধী কঠোর আইন প্রণয়নে সম্মত হয় লঙ্কান সরকার। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কর্মসূচির কেন্দ্রীয় স্তম্ভ হিসেবে দুর্নীতিবিরোধী ও প্রশাসনিক সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছি। অর্জিত সংস্কার যেন লঙ্কান জনগণের উপকারে আসে, তা নিশ্চিত করতে এগুলো অপরিহার্য। আইএমএফের মাধ্যমে বিস্তৃত ‘গভর্নেন্স ডায়াগনস্টিক এক্সারসাইজ’-এর অধীনে আসা প্রথম এশীয় দেশ হবে শ্রীলঙ্কা।

গত বছরের এপ্রিলে চার হাজার ৬০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক ঋণ খেলাপি হওয়ার আগেই শেষ অবলম্বন হিসেবে আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছিল লঙ্কান সরকার। স্বাধীনতা-উত্তর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে শ্রীলঙ্কা। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় শূন্যে পৌঁছেছে। ফলে খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানির মতো অতিজরুরি পণ্য আমদানি করতে পারছে না লঙ্কান সরকার। তার সঙ্গে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি এবং দীর্ঘস্থায়ী লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কার দুই কোটি ২০ লাখ মানুষকে।

এ অবস্থায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া জনগণ সরকারের চরম অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে গত বছরের শুরুর দিকে। তাতে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে এবং পরে গত জুলাই মাসে পদত্যাগ করেন। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক অধঃপতনের জন্য রাজপক্ষে পরিবারকে দায়ী করেন অনেকে।

রাকিব/এখন সময়